নাপিত্তাছড়া ঝর্না |
আসসালামু আলাইকুমঃ
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা বর্তমানে বেশ পরিচিত একটি নাম। নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের অবস্থিত একটি ঝর্ণা। ঝর্ণায় যাবার যে ঝিরিপথ আছে তা নাপিত্তাছড়া ট্রেইল নামে পরিচিত। তুলনামূলক সহজ ট্রেইল হওয়ায় একটু কষ্ট করলে একদিনেই পুরো ট্রেইল হেঁটে উপভোগ করতে পারবেন।কখন যাবেনঃ
ঝর্ণায় যাবার সবচেয়ে ভাল সময় বর্ষাকাল। তখন ঝর্ণা গুলোতে বেশ পানি থাকে। তবে অতি বর্ষার সময় ফ্ল্যাশ ফ্লাডের আশঙ্কা থাকে। তাই বর্ষায় ঘুরতে গেলে সেই ব্যাপারেও সাবধান থাকা ভালো। এছাড়া বছরের যে কোন সময়ই যেতে পারবেন।
কিভাবে যাবেনঃ
দেশের যেখান থেকেই আসুন এই ট্রেইলে যেতে প্রথমে আপনাকে চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নয় দুয়ারী বাজার আসতে হবে। নয় দুয়ারী বাজার থেকে ৪০-৫০ মিনিট হেঁটে এই ট্রেইল শুরু করতে হবে। পুরো ট্রেইল হেঁটে দেখতে ৪-৫ ঘন্টা লাগবে, তবে তা নির্ভর করবে আপনি পাহাড়ি ও ঝিরিতে হাটতে কতটুকু অভ্যস্ত তাঁর উপর। চাইলে শুধু নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা বা বান্দরখুম ঝর্না দেখেও ফিরে আসতে পারেন।
ঢাকা থেকে বাসে:
ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে চট্টগ্রাম গামী যে কোন বাসে করে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যেতে পারবেন। এস আলম, শ্যামলি, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ ইত্যাদি নন এসি বাস আছে। এসি বাসের মধ্যে গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, টি আর,ইত্যাদি। আপনার পছন্দ মত বাসে এসে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে নেমে যেতে হবে। সুপারভাইজারকে আগে বলে রাখলে আপনাকে নামিয়ে দিবে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে:
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে এসে ফেনী স্টেশনে নামতে হবে।ফেনী স্টেশন থেকে ১০-১৫ টাকা রিক্সা/অটো দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে বা লেগুনাতে করে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজার আসতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে নাপিত্তাছড়াঃ
চট্টগ্রাম নগরের অলংকার সিটি গেইট থেকে কিছু লোকাল বাসে করে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজার আসতে পারবেন।
ঝিরিপথ |
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল গাইডঃ
নয়দুয়ারী বাজার থেকে ট্রেইল ঘুরে দেখার জন্যে প্রয়োজনে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিতে পারেন। তবে আপনার যদি ট্রেইল সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকে তাহলে নিজেরাই ট্রেকিং করতে পারেন। প্রয়োজনে স্থানীক কাউকে জিজ্ঞেস করলেই পথ দেখিয়ে দিবে। আর যদি একেবারেই অনভিজ্ঞ হোন আর পুরো ট্রেইল কভার করতে চান তাহলে সাথে কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নেওয়াই ভালো হবে।
ঝর্নায় কিভাবে যাবেনঃ
নয়দুয়ারী বাজার থেকে পূর্ব দিকের রাস্তা রেল লাইন পার হয়ে আরও কিছুদূর হেঁটে গেলে নাপিত্তা ছড়া পাড়ার দেখা পাবেন। সেখান থেকে থেকে ঝিরি ও পাহাড়ি পথের ট্রেকিং শুরু হবে। কিছুদূর যাওয়ার পর প্রথমে এই ট্রেইলের টিপরা খুমের দেখা পাবেন। মূলত এটি একটি ক্যাসকেড। টিপরা খুমের উপরেই কুপিকাটা খুম। এই খুম বেশ গভীর। কুপিকাটা খুমের ডান পাশ দিয়ে পাহাড়ে উঠে আবার ঝিরিতে নেমে সামনে গেলে হাতের বামে আরও একটি ঝিরি পড়বে। এই ঝিরি ধরে ৩০ মিনিটের মত গেলে ঝিরির শেষ মাথায় বাঘ বিয়ানী ঝর্ণা দেখতে পাবেন। সেই ঝর্ণা দেখে আবার পিছনে এসে আগের ঝিরি ধরে সামনের এগিয়ে গেলে কিছু সুন্দর ক্যাসকেড পাবেন আর ঝিরির শেষে দেখা পাবেন বান্দর খুম ঝর্ণার। এই বান্দরখুম ঝর্ণাই এই ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা। আর এই ঝর্ণাই নাপিত্তা ছড়া ঝর্ণা নামে পরিচিত। এই ঝর্ণা দেখে আবার আগের পথ ধরে ফিরে আসুন।
কোথায় খাবেনঃ
নয়দুয়ারী বাজারে তেমন ভাল খাবার হোটেল নাই। তবে ট্রেইলে যাবার পথে একটা ছোট হোটেল আছে, সেখানে যদি আগে থেকে কি খাবেন তার অর্ডার দিয়ে যান তাহলে আপনাদের জন্যে রান্না করে রাখবে, তাহলে ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। এই সব স্থানীয় হোটেলে অনেক স্বল্পমূল্যে খাবার খেতে পারবেন তবুও প্রয়োজনে দাম যাচাই করে নিতে পারেন।
কোথায় খাকবেনঃ
এই ট্রেইল যেহেতু দিনে দিনেই শেষ করতে পারবেন তাই কোথাও থাকার দরকার প্রয়োজন হয়না। তবে যদি আপনি আরও জায়গা ঘুরে দেখতে চান আর রাতে থাকার দরকার হয় তাহলে একটু ভালো হোটেলে থাকলে চাইলে আপনাকে নয়দুয়ারী বাজার থেকে চলে যেতে হবে সীতাকুণ্ড বাজারে। সেখানে হোটেল সৌদিয়া ও সাইমুন মোটামুটি ভালো।
ভ্রমণের সাধারন কিছু টিপস অ্যান্ড ট্রিকসঃ
সবকিছুর ব্যাপারে পজিটিভ থাকুন; পজিটিভ ভাবুন সাথে কি কি নেয়া প্রয়োজন তার একটি তালিকা তৈরি করুন।
ভ্রমণের স্থানের স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যান।
ক্যামেরার জন্য এক্সট্রা ব্যাটারী নিতে ভুলবেন না
শীতকালে ভ্রমণ করলে যথেষ্ট পরিমান গরম কাপড় নিন
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি সাথে রাখুন কি কি জামাকাপড় পরবেন আগে থেকেই ঠিক করে নিন।
• টুথব্রাস, মুজা এবং অতিরিক্ত অন্তর্বাস সাথে রাখুন
• যে কোনো বাহনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দামাদামি করে নিবেন।
• ভ্রমণে বেশি বেশি পানি পান করুন যাতে ডিহাইড্রেট হয়ে না যান।
• কোন পথ বা ডিরেকশন সম্পর্কে জানতে যাকে তাকে জিজ্ঞেস না করে দোকানদারকে জিজ্ঞেস
করুন
• আপনার ভ্রমণ প্ল্যান সম্পর্কে অবশ্যই আপনার বাসার কাউকে অবহিত করে যান।
• সম্ভব হলে একটি ফার্স্ট এইড কিট সাথে রাখুন
শেষ কথাঃ
কিছু খেয়ে প্লাস্টিক সব জায়গায় ফেলবেন না।প্রকৃতির সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না।আমাদের সম্পদ আমাদেরকেই বাচাতে হবে।
ভালো থাকবেন আবার দেশের অন্য কোন পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে আসবো।
কোন ধরনের ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন