একদিনে সন্দীপ ভ্রমন।Tour In Swandwip

Ismail Hossain
0

 

সন্দীপ


সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ এবং উপজেলা। এটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি দ্বীপ যেখানে প্রায় ৪৫০,০০০ জনসংখ্যা রয়েছে। এই দ্বীপটির আয়তন ৪৮৮.৫২ বর্গকিমি এবং ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত।


দ্বীপের প্রত্যেকটি জায়গা দেখার মতন। ফসল ভরা মাঠ সবুজ প্রকৃতি, হাট বাজার সব কিছু দ্বীপের উত্তর থেকে দক্ষিনের সব প্রান্ত ঘুরে দেখতে পারেন আরামে। দ্বীপের উত্তরে তাজমহলের আদলে নির্মিত শত বছরের পুরনো মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ। মসজিদ সংলগ্ন বড় দিঘী মাজার। দ্বীপের দক্ষিনের ঐতিহ্যবাহী শুকনা দিঘী। এছাড়া রয়েছে মসজিদ, স্কুল, মাদ্রাসা, বড় বড় খেলার মাঠ।

oppo-reno-11-pro


সন্দীপ এর দর্শনীয় স্থান গুলোঃ

দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি:

সন্দীপ গুপ্তছড়া ঘাটে নির্মিত হয়েছে দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি। জেটির দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টের আলোর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। সাগরের গর্জনের শব্দের সাথে সাথে সাগরের শীতল হাওয়া আপনাকে এনে দিবে অনাবিল প্রশান্তি। এই জেটির দুই পাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, যা জেটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।



সমুদ্র সৈকত

সৈকতটি সন্দ্বীপ এর রহমতপুরে ইউনিয়নে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি রহমতপুর পুরাতন স্টিমারঘাট নামে পরিচিত। পড়ন্ত বেলায় পশ্চিম আকাশে তেজ কমে যাওয়া সূর্যটা সৈকতের প্রান্ত জুড়ে ছড়িয়ে দেয় রক্তবর্ন আভা। এই সমুদ্র সৈকতে আপনি দেখতে পাবেন সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য। সৈকতটি ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তীর্থস্থানে পরিনত হয়েছে যা ক্যাম্পিং এর টেন্ট পিচ এর জন্যে আদর্শ। সমুদ্র সৈকতটির দৈঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার।


সবুজ চর

নাম শুনেই হয়তো অনেকটা অনুমান করতে পারছেন কেন এই জাইগাটির নাম সবুজচর। স্থানীয় অনেকে এই স্থানটিকে গ্রিনল্যান্ডও বলে। এই স্থানটি সন্দ্বীপ এর দীঘাপাড় ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধরূপ সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়ানো এই চরটি। যতদূর চোখ যাবে সবুজ আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আপনাকে উৎফুল্ল করবে।

এই চরে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন এবং বনে রয়েছে বক, চিল, মাছরাঙা, বালিহাস, ময়না, টিয়া ঘুঘুসহ আরো অনেক রকম পাখি। শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে ওঠে এই গ্রীনল্যান্ডটি। ভাড়া চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি দিয়ে সন্দ্বীপ কমপ্লেক্স থেকে ৪০-৫০ মিনিটে মধ্যে পৌঁছে যাবেন সবুজ চরে।


ভ্রমণের সেরা সময়

সন্দ্বীপ ভ্রমণ করার জন্যে শীতকাল সময়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত। এ সময় আপনি চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। আর সমুদ্র শান্ত থাকায় ও গরম না থাকায় এই সময়টাতে মানুষ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে।


খাবারের সুবিধা

সন্দ্বীপ এর স্থানীয় খাবার হোটেলে সাধারন সকল খাবার পাবেন এবং খাবারের মানও স্বাভাবিক মানের হবে, আহমরি কিছু আশা করবেন না। খরচ তেমন বেশি একটা হবেনা নরমালি। গ্রীন চিলিজ্ রেস্টুরেন্টে ইন্ডিয়ান চাইনিজসহ সকল ধরনের খাবার পাবেন। শিবের হাট এলাকায় গেলে পাবেন প্রায় ৮০ বছরের ঐতিহ্য বিনয় শাহার ছানার তৈরি মিষ্টি।



সন্দ্বীপ যাওয়ার নিয়ম

ঢাকা থেকে লঞ্চে করে

ঢাকা থেকে লঞ্চে সন্দ্বীপ যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে সদরঘাট। সপ্তাহে তিন দিন এই সার্ভিস থাকে যা সকাল ৯ টায় সদরঘাট ছেড়ে যায় সন্দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে।


ঢাকা থেকে বাসে

বাসে যেতে চাইলে ঢাকার গাবতলি বা সায়দাবাদ থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে করে চলে যান সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট।তবে বাসের সুপারভাইজারকে বলে রাখবেন কুমিরা ঘাটে নামিয়ে দিতে।


ঢাকা থেকে ট্রেনে

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গামী যেকোন ট্রেনে উঠে গেলেই কুমিরা রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া যাবে।তবে ট্রেন কোন কোন স্টেশনে থামে তা আগেই দেখে রাখবেন।না হয় চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে।চট্টগ্রাম থেকে আবার বাসে আসতে হবে।


চট্টগ্রাম থেকে বাসে

চট্টগ্রাম এর অলংকার বা একেখান মোড় থেকে ফেনী গামী যেকোন বাসে উঠে যাবেন।বাসের সুপারবাইজার কে বলবেন কুমিরা ঘাট নামবেন।তারাই আপনাকে নামিয়ে দিবে।ভাড়া ৬০-৭০ টাকা।


কুমিরা থেকে লঞ্চঘাট

বাস আপনাকে যেখানে নামাবে সেখান থেকে জনপ্রতি ১০-২০ টাকা ভাড়ায় অটোরিকশা করে চলে যাবেন লঞ্চ ঘাটে। এই ঘাটের নাম কুমিরা-সন্দীপ লঞ্চঘাট। এই প্রান্তে কুমিরা এবং অপর পাশে সন্দ্বীপ।


লঞ্চঘাট থেকে সন্দীপ

কুমিরা থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি স্পীডবোটে ৩০০-৩৫০ টাকা, ট্রলারে ১৬০ টাকা।ট্রলার জোয়ার এর সময় ছাড়ে। তাই সবচেয়ে ভালো অপশন স্পীডবোট। তাই সেখানে পৌঁছেই কাউন্টারে গিয়ে নাম লিখিয়ে সিরিয়াল নিয়ে নিবেন। ওপারে পৌঁছে সন্দীপ গুপ্তছরা ঘাট থেকে সন্দীপ মূল শহর(এনাম নাহার) পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা(রিজার্ভ)।


সন্দ্বীপ থাকার ব্যবস্থা

সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্সে পৌঁছে হোটেল নিয়ে নিন। এনাম নাহারে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে যাদের মধ্যে অন্যতম

এছাড়া উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে থাকা যেতে পারে এজন্য যোগাযোগ করতে হবে উপজেলা পরিষদে।তাই যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে গেলে ভালো হয়।


ক্যাম্পিং সুবিধা

যারা ক্যাম্পিং করতে চান তাঁরা সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্সে পৌঁছে সোজা সরাসরি চলে যান দ্বীপের পশ্চিমে একেবারেই নদীর কিনার ঘেঁষে রহমতপুর সমুদ্র সৈকত। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সাহায্য নিতে পারেন। উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে তাবু ভাড়া করে নিন।অথবা সাথে করে নিয়ে গেলে আরো ভালো হয়।তবে সাবধান থাকবেন। রাতের মিটিমিটি আলো, খোলা আকাশের নিচে নদীর কলকল ধ্বনি ঘন কুয়াশায় কয়েকটি রাত পার করে দিতে পারবেন একেবারেই অনায়াসে। এ ছাড়া কফি হাউজ তো আছেই। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই কফি হাউজ দেখিয়ে দিবে।


ভ্রমণের সাধারন কিছু টিপস অ্যান্ড ট্রিকসঃ

সবকিছুর ব্যাপারে পজিটিভ থাকুন; পজিটিভ ভাবুন সাথে কি কি নেয়া প্রয়োজন তার একটি তালিকা তৈরি করুন।

ভ্রমণের স্থানের স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যান।

ক্যামেরার জন্য এক্সট্রা ব্যাটারী নিতে ভুলবেন না

শীতকালে ভ্রমণ করলে যথেষ্ট পরিমান গরম কাপড় নিন

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি সাথে রাখুন কি কি জামাকাপড় পরবেন আগে থেকেই ঠিক করে নিন।

• টুথব্রাস, মুজা এবং অতিরিক্ত অন্তর্বাস সাথে রাখুন

• যে কোনো বাহনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দামাদামি করে নিবেন। • ভ্রমণে বেশি বেশি পানি পান করুন যাতে ডিহাইড্রেট হয়ে না যান।

• কোন পথ বা ডিরেকশন সম্পর্কে জানতে যাকে তাকে জিজ্ঞেস না করে দোকানদারকে জিজ্ঞেস

করুন

• আপনার ভ্রমণ প্ল্যান সম্পর্কে অবশ্যই আপনার বাসার কাউকে অবহিত করে যান। • সম্ভব হলে একটি ফার্স্ট এইড কিট সাথে রাখুন


শেষ কথাঃ

কিছু খেয়ে প্লাস্টিক সব জায়গায় ফেলবেন না।প্রকৃতির সৌন্দর্য  নষ্ট করবেন না।আমাদের সম্পদ আমাদেরকেই বাচাতে হবে।

ভালো থাকবেন আবার দেশের অন্য কোন পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে আসবো।

কোন ধরনের ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।


আরো দেখুনঃ👇

কুমিরা ঘাট ভ্রমন 👈

মহামায়া লেক ভ্রমন👈

নাপিত্তাছড়া ঝর্না ভ্রমন👈

খৈয়াছড়া ঝর্না ভ্রমন👈

পারকি সমুদ্র সৈকত ভ্রমন👈

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমন 👈

সহস্রধারা ঝর্না ভ্রমন 👈

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ👈

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)
Demos Buy Now